স্বাস্থ্য ও শক্তি ফিরে পেতে কয়েক মিনিট ব্যায়াম যথেষ্ট


শারীরিক ব্যায়াম আমাদের শরীর ও মনে ভালো প্রভাব ফেলে। হাঁটা, দৌড়ানো কিংবা খেলা করার মতো ব্যায়াম আমাদের শরীরকে শক্তিশালী ও সুস্থ করে তোলে। এটি আমাদের হৃদয় ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং পেশী ও হাড়কে মজবুত রাখে। ব্যায়াম আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং জীবনকে নিয়ন্ত্রণ রাখে।


জিমে গিয়ে দীর্ঘ সময় ব্যয় করা বা প্রতিদিন এক ঘণ্টা দৌড়ানোর মতো সময় সবার হাতে থাকে না। কিন্তু, বিজ্ঞানীরা এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখন বলছে যে, সুস্থ থাকতে এবং শক্তি ফিরে পেতে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই। বরং, মাত্র কয়েক মিনিটেরচ ব্যায়ামই যথেষ্ট।


১. দীর্ঘ ব্যায়ামের না করে অল্প সময়ই কার্যকর ব্যায়াম

আমাদের মনে ধারণা ছিল যে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে গেলে প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে। কিন্তু, আধুনিক গবেষণা এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে শরীরের কার্যকারিতা অনেক বাড়ানো সম্ভব। এই ধরনের ব্যায়ামগুলো মূলত অল্প সময়ের জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে করা হয়, যা শরীরের শক্তি হার বাড়িয়ে দেয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে।

২. কেন কয়েক মিনিটের ব্যায়ামই যথেষ্ট?

  • সময় সাশ্রয়ী: যাদের সময় কম, তাদের জন্য এটি আদর্শ। সকালের ব্যস্ততার মাঝে ১০ মিনিট বা কাজ থেকে ফিরে সন্ধ্যায় ১৫ মিনিটের ব্যায়াম খুব সহজেই করা যায়।

  • মানসিক চাপ কমায়: শুধু শরীর নয়, ব্যায়াম মনের জন্যও উপকারী। এটি আমাদের আনন্দ দেয় এবং দুশ্চিন্তা কমায়। ব্যায়াম করার সময় মস্তিষ্ক এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ ছাড়ে যা আমাদের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি আমাদের ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে এবং মানসিকভাবে সুস্থ রাখে।

  • হজম শক্তি উন্নত করে: হালকা থেকে মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। খাবার পর কিছু হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা হজমের সমস্যা দূর করতে পারে।

  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: অল্প সময়ের জন্য করা উচ্চ তীব্রতার ব্যায়াম হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে এবং রক্তনালীগুলোকে সচল রাখে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

  • পেশী গঠন এবং শক্তি বৃদ্ধি: সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র ব্যায়াম পেশীগুলোকে কার্যকরভাবে উদ্দীপিত করে, যার ফলে পেশীর আকার এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।

৩. কিছু কার্যকর কয়েক মিনিটের ব্যায়ামের রুটিন

এখানে কিছু ব্যায়ামের উদাহরণ দেওয়া হলো যা আপনি আপনার প্রতিদিনের রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন:

  • HIIT রুটিন (High-Intensity Interval Training): এটি একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। এর মধ্যে কিছু ব্যায়াম রয়েছে যেমন:

    • জাম্পিং জ্যাক (Jumping Jacks): ৩০ সেকেন্ড ধরে করুন।

    • স্কোয়াট (Squats): ৩০ সেকেন্ড ধরে করুন।

    • বার্পি (Burpees): ৩০ সেকেন্ড ধরে করুন।

    • পুশ-আপ (Push-ups): ৩০ সেকেন্ড ধরে করুন।

    • প্রতিটি ব্যায়ামের পর ১০-১৫ সেকেন্ড বিশ্রাম নিন। এই ব্যায়ামগুল স্বাস্থ্য ও মন ভালো থাকবে ।

  • যোগব্যায়াম (Yoga): এটি শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতাও নিশ্চিত করে।

    • সূর্য নমস্কার (Surya Namaskar): এটি ১০-১৫ মিনিটের একটি সম্পূর্ণ প্যাকেজ, যা শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে সক্রিয় করে।

    • ভুজঙ্গাসন (Cobra Pose): এটি পেটের পেশী এবং মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করে।

    • শবাসন (Corpse Pose): ব্যায়ামের শেষে কিছুক্ষণের জন্য শবাসনে থাকলে শরীর শান্ত হয় এবং শক্তি ফিরে আসে।

  • প্লাঙ্ক (Plank): এটি একটি স্থির ব্যায়াম যা শরীরের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে। প্রথমে ৩০ সেকেন্ড ধরে প্লাঙ্ক করুন, তারপর ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে এক মিনিট বা তার বেশি করুন।

৪. ব্যায়ামের আগে এবং পরে কী করবেন?

  • ব্যায়ামের আগে (Warming Up): ব্যায়ামের আগে শরীরকে প্রস্তুত করা জরুরি। হালকা স্ট্রেচিং বা কয়েক মিনিট হালকা হাঁটা পেশীগুলোকে ব্যায়ামের জন্য প্রস্তুত করে এবং আঘাতের ঝুঁকি কমায়।

  • ব্যায়ামের পরে (Cooling Down): ব্যায়ামের পর শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হালকা স্ট্রেচিং বা যোগব্যায়াম করুন। এটি পেশীর ব্যথা কমাতে এবং শরীরকে শান্ত করতে সাহায্য করে।

৫. নিয়মিততা এবং ধারাবাহিকতা কেন জরুরি?

যেকোনো ব্যায়ামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নিয়ম করে করা। সপ্তাহে সাত দিন এক ঘণ্টা ব্যায়াম করার চেয়ে প্রতিদিন ১০ মিনিট ব্যায়াম করা বেশি ফলপ্রসূ। যখন আপনি ব্যায়ামকে আপনার দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তুলবেন, তখন এটি আর বোঝা মনে হবে না, বরং এটি একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় অভ্যাস হয়ে উঠবে।

৬. পরিশেষে: একটি নতুন জীবনধারা

সকল বয়সের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করাও এর উপকার পায়। প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলেই জীবনে বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। তাই, প্রতিদিন কিছুটা সময় ব্যায়ামের জন্য বের করাই ভালো। এটি আমাদের সুখী ও সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। রাসায়নিক পদার্থ ছাড়ে যা আমাদের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি আমাদের ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে এবং মানসিকভাবে স্বস্তি দেয়। নিয়মিত ব্যায়াম ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রান্না ও গল্পকথার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url